লিথায়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি কেনার পূর্বে জানুন!

লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি বর্তমানে বাংলাদেশে একটি ট্রেন্ডিং টপিক। বিশেষ করে যখন গরমের শুরুতে সকলেই আইপিএস/ হাইব্রিড সোলার সিস্টেম ক্রয়ের কথা চিন্তা করছেন।


এই সুযোগে বাজারে অনেক ধরেনর LiFePO4 ব্যাটারি বাজারজাত হতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন নামে বেনামে ব্র্যান্ড আকারে এগুলো বাজারজাত হচ্ছে। যদিও এ টেকনোলজি বহুকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কনজুমার লেভেলে এখনও এটি ততটা বিস্তার লাভ করেনি বাংলাদেশে। এর প্রধার কারন হলো এটি সচরাচর ব্যবহৃত লেড এসিড বা প্রচলিত নাম “পানির ব্যাটারি"র তুলনায় এক্সপেনসিভ। তাই এই টেকনোলজির ব্যাটারি সম্পর্কে অনেকেই ভাল ধারনা রাখেন না।
বাজারে এইমুহুর্তে বিভিন্ন ধরনের সুদৃশ্য ব্যাটারি প্যাক বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। আবার প্রিজমেটিক সেলের সমন্বয়ে কাস্টম ব্যাটারি প্যাক আকারেও বিক্রি হচ্ছে। ব্যাটারি প্যাকগুলোতে রয়েছে এলসিডি ডিসপ্লে, আধুনিক BMS (ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)। এগুলো দেখতে খুবই চমৎকার। কিন্তু আসলেই কি এগুলো মানসম্পন্ন? ভাল মানের লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি চিনার উপায় কি? অনেক ফাংশন থাকলেই এটি কি মানসম্পত? একটি ব্যাটারির ব্যবহার উপযোগিতা এবং আয়ুস্কাল নির্ভর করে কিসের উপর?


১) লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারির (LiFePO4) একটি বৈশিষ্ট হলো এর Cycle Life. অর্থাৎ, একটি ব্যাটারি/ ব্যাটারি প্যাককে সর্বোচ্চ কতবার চার্জ এবং লোড ব্যবহার করে ডিসচার্জ করা যাবে। সাধারনত ভাল মানের ব্যাটারি গুলো ৪০০০-৮০০০ সাইকেলের হয়। একবার যদি ব্যাটারি প্যাকটি চার্জ করা হয় এবং সম্পূর্ণরূপে ডিসচার্জ করা হয়, সেটি হবে এক সাইকেল। এভাবে ৪০০০-৮০০০ বার রিপিট করা যাবে। তারপর ব্যাটারির স্পেশিফিকেশন অনুযায়ি তার ক্যাপাসিটি ৭০-৮০% এ চলে আসবে। তাই এটি সতর্কতার সহিত দৈনিক কতবার লোডশেডিং হয় এবং লোড ব্যবহারের উপর নির্ভর করে আপনার ইনর্ভাটারটি কনফিগার করতে হবে, যেন ইফেসিয়েন্টলি ব্যবহার করা যায়।


২) ইন্টারনাল রেজিস্টেন্স হলো ব্যাটারির আরেকটি important বৈশিষ্ট। এটি পরিমাপের একক হলো ওহমস (Ohms)। যেহেতু নতুন ব্যাটারির ক্ষেত্রে এটি খুব কম হয়, তাই মিলি ওহমস (1/1000th of Ohm) হিসেবে গননা করা হয়। যেমন ব্র্যান্ড নিউ EVE/ CATL ব্র্যান্ডের 105-200Ah ব্যাটারিগুলোর ইন্টারনাল রেজিস্টেন্স ০.৩-০.৬ মিলি ওহমস হয়ে থাকে। রেডিমেড ব্যাটারির ক্ষেত্রে সেলারের কথার উপর ভরসা করতে হবে। যেহেতু তারা ব্যাটারি প্যাকটি ডিএসেম্বল করে দেখাতে পারবে না। কিন্তু কাস্টম ব্যাটারি প্যাকের ক্ষেত্রে তা পরিমাপ করে নিতে পারেন। তবে কোন অবস্থাতেই একটি ব্যাটারি সেলের ইন্টারনাল রেজিস্টেন্স শূন্য হবে না। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন পরিমাপক যন্ত্রের কারসাজির শিকার না হন।


৩) DOD (Depth of discharge), অর্থাৎ কতটুকু পর্যন্ত আপনি ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ব্যবহার করতে পারবেন। সাধারনত LiFePO4 এর ক্যাপাসিটির ৮০% ও সর্বোচ্চ ১০০% পর্যন্ত ডিসচার্জ করা যায়। তবে ডিপ ডিসচার্জের ক্ষেত্রে সাইকেল লাইফ কিছুটা কমে আসে। অন্যদিকে সাধারন লেড এসিড ব্যটারি ৫০-৬০% ডিসচার্জ করা যায়।


৪) ব্যাটারিটি কোন ব্র্যান্ডের? মূল্ত ব্যাটারি বলতে বুঝানো হচ্ছে ব্যাটারি সেল (নিম্নে বিস্তারিত)। ভালমানের এবং টপ টিয়ারের ব্র্যান্ডগুলো হলো EVE, CATL, Higee, REPT, Gotion, BYD, YinLong ইত্যাদি। আপনারা গুগেলো সার্চ করে এ ব্র্যান্ডগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।


৫) লিথিয়াম আয়রন ফসফেট একটি ব্যাটারি সেলের ভোল্টেজ হলো ৩.২ ভোল্ট। যেহেতু আইপিস/ হাইব্রিড সোলার ইনভার্টারগুলো ১২ভোল্ট/ ২৪ভোল্ট/ ৪৮ভোল্ট সেটাপের হয়ে থাকে। তাই একাধিক ব্যাটারি সেলকে পাশাপাশি সিরিজ আকারে কানেক্ট করে ব্যাটারি প্যাক তৈরী করা হয়। এবং এ ব্যাটারি প্যাক সঠিকভাবে চার্জ/ ডিসচার্জ পরিচালনা করার জন্য ব্যবহৃত হয় একং কন্ট্রোলার বোর্ড, যেটাকে BMS (Battery management system) বলা হয়।
তাই বাজারে পাওয়া যায় এমন ব্যাটারি প্যাকগুলোতে কি সেল ব্যবহার করা হয়েছে তা জানা জরুরি। সেগুলো হতে পারে সিলিন্ডার আকৃতির সেল বা প্রিজমেটিক সেল। এখানে প্যাকটি কোন ব্র্যান্ডের সেটা জানার চেয়ে, এতে ব্যবহৃত সেলগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি। সিলিন্ডার আকৃতির সেলগুলো সাধারনত ২০০০ সাইকেলের বেশি হয় না।


৬) আর যদি কাস্টম ব্যাটারি প্যাক ক্রয় করার ইচ্ছা থাকে, তবে অবশ্যই সেলগুলোর ব্র্যান্ড, ম্যানুফেকচারিং ডেট ইত্যাদি দেখে ক্রয় করতে হবে। ব্যাটারি সেলের বডিতে দেয়া QR কোড স্ক্যান করে এই তথ্যগুলো যাচাই করা যায়। QR কোড না থাকলে অবশ্যই এ ব্যাটারি প্যাক ক্রয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।


৭) তারপর, BMS বা ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যেটা ব্যাটারি প্যাকটি চার্জ/ ডিসচার্জ রেট কন্ট্রোল করে। ভাল কোয়ালিটির না হলে তা প্যাকের ভোল্টেজ প্রিসাইসলি ব্যালেন্স করতে পারবে না। এতে Battery cell ফুলে ওঠা (swelling), গরম হয়ে যাওয়া (overheat) ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই এটি ভাল ব্র্যান্ডের হতে হবে। যেমন DALY, JK, JBD ইত্যাদি।


৮) সর্বশেষে, একটি নতুন ও জেনুইন ক্যাপাসিটি LiFePO4 ব্যাটারি সাধারন লেড এসিড/ পানির ব্যাটারির তুলনায় প্রায় দ্বিগুন ব্যাকআপ দেয় (DOD এর দরুন)। তাই আপনি যদি 200Ah লেড এসিড ব্যাটারি ক্রয়ের পরিকল্পনা করে থাকেন এর অল্টারনেটিভ হিসেবে 100Ah LiFePO4 ব্যাটারিই যথেষ্ট সমপরিমান ব্যাকআপ পেতে।
এই কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে আশরা করা যায় এই ব্যাটারি ক্রয়ে আপনি ঠকবেন না।