থ্রিডি প্রিন্টিং সার্ভিস (3D Printing Service) এখন হাতের নাগালে

বর্তমান বিশ্বে থ্রিডি প্রিন্টিং একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা দ্রুত প্রোটোটাইপিং, কাস্টমাইজড ম্যানুফ্যাকচারিং এবং বিভিন্ন শিল্পে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেছে। পূর্বে একটি প্রটোটাইপ ডিজাইন করতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হত। বিশেষ করে CNC machinging এর মত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ, একটি দ্রুত বর্ধনশীল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করে তুলেছে এই টেকনোলজি এবং দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছ।

 

থ্রিডি প্রিন্টিং কী?

থ্রিডি প্রিন্টিং একটি এমন প্রযুক্তি, যা ডিজিটাল ডিজাইন বা নকশা থেকে ত্রিমাত্রিক বস্তুব বস্তু বা পদার্থে পরিণত করে। প্লাস্টিক, ধাতু, রেসিন বা অন্যান্য উপকরণগুলো ব্যবহার করে মূলত এ বস্তুটি গঠিত হয়। লেয়ারের উপর লেয়ার বসিয়ে 3D ডিজাইনটির একটি বাস্তব রূপ দেয়া হয় একই থ্রিডি প্রিন্টিং টেকনোলজির মাধ্যমে এবং একটি সম্পূর্ণ মডেল বা পণ্য তৈরি করতে সক্ষম। ডিজাইন থেকে উৎপাদন পর্যন্ত এই পুরো প্রক্রিয়াটি কম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হয়, যা এটি কাস্টমাইজড এবং দ্রুত প্রটোটাইপিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রক্রিয়া।

 

বাংলাদেশে থ্রিডি প্রিন্টিং সার্ভিসের সম্প্রসারণ

বাংলাদেশে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি দ্রুত প্রসার লাভ করছে, এবং এর ব্যবহার শিল্প, স্থাপত্য, মেডিকেল, শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান এবং স্টার্টআপ এই সার্ভিসটি প্রদান করছে বেশ কিছু কাল ধরে। বিভিন্ন ধরনের মডেল তৈরীতে সক্ষম হলেও প্রফেশনাল কোয়ালিটির স্থানটি শূন্যই থেকে যায়। কেননা একটি মডেল উৎপাদনে tolerance সঠিকভাবে মান্য করা না হলে তা বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া প্রতিটি ডিজাইন/ মডেল ইউনিক হওয়াতে থ্রিডি প্রিন্ট মেশিন অপারেটর বা সর্ভিস টিমের সাথে ই-মেইল বা মেসেঞ্জারে যোগাযোগর মাধ্যমে এর প্রিন্টিং খরচ নির্ধারন করতে হয় যা সম্পূর্ণভাবে একটি মেনুয়্যাল প্রসেস। এটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যপার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সঠিকসময়ে অপারেটরের পক্ষে রিপ্লাই দেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া প্রটোটাইপিং ক্রমপরিবর্তনশীল, যেমন এর Infill Density কত হবে, রং, মেটেরিয়াল পরিবর্তনের সাথে সাথে এর খরচও পরিবর্তিত হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিবার যোগাযোগে উভয়েরই সময় ও শ্রম ব্যয় হয়।

 

তাই BDTronics সর্বপ্রথম ২০২১ সালে বানিজ্যিকভাবে থ্রিডি প্রিন্টিং সার্ভিস প্রদান করা শুরু করে যার প্রধান লক্ষ্য হলো High Quality এবং High Precision থ্রিডি প্রিন্টং সেবা যা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল প্রটোটাইপিং , মেডিকেল প্রস্থেটিক উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারে। সেই সাথে কোটেশন প্রক্রিয়াটি একটি যুগান্তকারি ও সম্পর্ণ অটোমেটেড সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছে। মাত্র কয়েকটি ধাপে যে কেউ তার নির্দিষ্ট মডেলটি প্রিন্ট করতে কত খরচ হবে তা জানতে পারে। এজন্য প্রথমে মডেলটি CAD সফটওয়্যার থেকে STL ফাইলে সেভ করতে হবে। তারপর নিম্নের লিংকটি ভিজিট করুন:

 

https://www.bdtronics.com/print3d

 

এই পেইজে আপলোড অপশানের মাধ্যমে মডেলটি আপলোড করতে হবে। তারপর, মডেলেটির জন্য Infill Density (সহজ বাংলায় মডেলের স্টাকচারটি কতটুকু মজবুত হবে), মেটেরিয়াল (PLA/ABS/PETG প্লাস্টিক কিংবা TPU রাবার টাইপের হবে), মডেলটির রং, পরিমান ইত্যাদি বাছাই করতে পারবেন। তারপর শুধুমাত্র "Get Instant Quotation" বাটনে চাপ দিয়ে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করলেই সাথে সাথে পেয়ে যাচ্ছেন মডেলটি প্রিন্টং খরচ ও এস্টিমেটেড ডেলিভারির সময়।

 

 

থ্রিডি প্রিন্টিং এর সম্ভাবনা

১. শিল্পখাতে প্রয়োগ: থ্রিডি প্রিন্টিং শিল্পখাতে ডিজাইন থেকে উৎপাদনের সময় হ্রাস করেছে এবং খরচ কমিয়েছে। বিভিন্ন ফ্যাক্টরি এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রটোটাইপ তৈরি করছে এবং তা দ্রুত বাজারে আনতে পারছে।

২. শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যবহার: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের হাতে বাস্তব অভিজ্ঞতা আনতে সাহায্য করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য এবং ডিজাইনিং ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ধারণা থেকে বাস্তব মডেল তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টির পাশপাশি সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করছে।

৩. মেডিকেল সেক্টরে উন্নয়ন: মেডিকেল খাতে থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে কাস্টমাইজড মেডিকেল ডিভাইস এবং প্রস্থেটিকস তৈরি করা হচ্ছে। এটি রোগীদের জন্য উপযোগী, নতুন আইডিয়ার প্রয়োগ ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা সমাধান প্রদান করছে।

 

বাংলাদেশে থ্রিডি প্রিন্টিং সার্ভিসের ভবিষ্যৎ

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি বাংলাদেশে নতুন হলেও এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। কাস্টম পণ্য তৈরির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এই প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে। ছোট এবং মাঝারি উদ্যোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে তাদের প্রোটোটাইপ এবং কাস্টম পণ্য তৈরি করতে পারবেন, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

 

 

সার্ভিসের সহজলভ্যতা

বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে থ্রিডি প্রিন্টিং সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো ডিজিটাল নকশা অনুযায়ী আপনি আপনার পণ্য অর্ডার করতে পারেন। সার্ভিসের খরচ নির্ভর করে পণ্যের আকার, ব্যবহৃত উপকরণ, প্রিন্টিং এর সময় এবং বস্তুটি গঠনের জটিলতার উপর। সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং সম্ভাবনা অপরিসীম। প্রযুক্তি যেমন উন্নত হচ্ছে, তেমনই থ্রিডি প্রিন্টিং সার্ভিস দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।

BDTronics এ থ্রিডি