ইনভার্টার কি এবং সোলার সিস্টেমে বা সৌরশক্তি ব্যবহারে সঠিক ইনভার্টারের গুরুত্ব

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং একটি সাধারণ ঘটনা। বিশেষ করে এই সময়ে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বিদ্যুৎ খরচও বাড়তে থাকে। বর্তমান সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ও খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেক পরিবার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজছে। এর মধ্যে সোলার পাওয়ার একটি কার্যকরী সমাধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফ গ্রিড সোলার সিস্টেম এমন একটি প্রযুক্তি যা আপনাকে লোডশেডিং থেকে মুক্তি দিতে এবং শক্তি খরচ কমাতে সাহায্য করে।

সোলার সিস্টেম স্থাপনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হল ইনভার্টার সিলেক্ট করা। আজ আমরা সোলার সিস্টেমে ইনভার্টারের বৈশিষ্ট্য, লোডশেডিং মোকাবিলা এবং বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয়ের দিক নিয়ে আলোচনা করব। সেই সাথে ইনভার্টারের ফিচার এবং এর সুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো, বিশেষ করে লোডশেডিং ও শক্তি খরচ কমানোর ক্ষেত্রে।

 

ইনভার্টার কি?

একটি ইনভার্টার হলো এমন একটি ডিভাইস যা ডিসি (ডিরেক্ট কারেন্ট) বিদ্যুৎকে এসি (অলটার্নেটিং কারেন্ট) বিদ্যুতে রূপান্তর করে। সোলার প্যানেলগুলি সাধারণত ডিসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যা আমাদের গৃহস্থালির যন্ত্রপাতিতে সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। ইনভার্টার এই ডিসি বিদ্যুৎকে এসি বিদ্যুতে রূপান্তর করে, যা আমাদের দৈনন্দিন যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা যায়। অফ গ্রিড ইনভার্টার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম, যা গ্রিডের উপর নির্ভরতা কমায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে।

 

ইনভার্টারের প্রকারভেদ:

সোলার ইনভার্টার সাধারনত ৩ ধরনের হয়ে থাকে: অফ গ্রিড ইনভার্টার, অন গ্রিড ইনভার্টার, এবং হাইব্রিড ইনভার্টার। প্রতিটি ধরনের ইনভার্টারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে। আজ আমরা এই তিন ধরনের ইনভার্টার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

 

১. অফ গ্রিড ইনভার্টার:

অফ গ্রিড ইনভার্টারের বৈশিষ্ট্য:

  • স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ: অফ গ্রিড ইনভার্টার সম্পূর্ণভাবে গ্রিডের বাইরে কাজ করে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা স্বাধীনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্যাটারি সঞ্চালন: এই ইনভার্টারগুলি সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনীয় সময়ে সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
  • লোডশেডিং মুক্ত: অফ গ্রিড ইনভার্টার ব্যবহারকারীদের লোডশেডিং থেকে মুক্তি দেয়, কারণ এটি নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
  • সরাসরি বিদ্যুৎ: আবার কিছু কিছু অফ-গ্রিড ইনভার্টার সরাসরি সৌরশক্তি থেকে গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে কোনরূপ ব্যাটারি ছাড়াই।

সুবিধা:

  • গ্রামীণ এবং দূরবর্তী এলাকায় যেখানে গ্রিড বিদ্যুৎ পৌঁছেনি সেখানে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
  • লোডশেডিং-এর সময়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।

 

২. অন গ্রিড ইনভার্টার:

অন গ্রিড ইনভার্টারের বৈশিষ্ট্য:

  • গ্রিড সংযোগ: অন গ্রিড ইনভার্টার সরাসরি গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রিডে সরবরাহ করে।
  • বিদ্যুৎ বিক্রয়: এই ইনভার্টারের মাধ্যমে সোলার সিস্টেমের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে বিক্রি করা যায়, যা বিদ্যুৎ বিল কমাতে সহায়ক।
  • কোনও ব্যাটারি প্রয়োজন নেই: অন গ্রিড ইনভার্টারে ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না, কারণ এটি সরাসরি গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকে।

সুবিধা:

  • বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করে।
  • অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে বিক্রি করে আয় করতে পারে।

 

৩. হাইব্রিড ইনভার্টার:

হাইব্রিড ইনভার্টারের বৈশিষ্ট্য:

  • দুই ধরনের সুবিধা: হাইব্রিড ইনভার্টার অফ গ্রিড এবং অন গ্রিড উভয় প্রকারের ইনভার্টারের সুবিধা প্রদান করে। এটি গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে এবং ব্যাটারি ব্যবহার করেও কাজ করতে পারে।
  • ব্যাকআপ পাওয়ার: লোডশেডিং-এর সময় ব্যাটারিতে সংরক্ষিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
  • স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ: হাইব্রিড ইনভার্টার স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে আসে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।

সুবিধা:

  • লোডশেডিং-এর সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
  • অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে বিক্রি করে আয় করতে পারে।
  • বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী গ্রিড এবং ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।

 

অফ গ্রিড ইনভার্টার-এর ফিচারসমূহঃ

১. উচ্চ দক্ষতা: ইনভার্টার ৯৮% পর্যন্ত কনভার্সন এফিশিয়েন্সি প্রদান করে, যা সোলার প্যানেল থেকে সর্বাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করে।

২. স্মার্ট মনিটরিং: এই ইনভার্টারে স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম রয়েছে, যা রিয়েল-টাইম ডাটা প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীদের সহজে সিস্টেমের পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে সহায়তা করে।

৩. উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা: ইনভার্টার ওভারলোড প্রোটেকশন, শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন, ওভার-টেম্পারেচার প্রোটেকশনসহ বিভিন্ন সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে, যা সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখে।

৪. মাল্টি-ফাংশনাল ডিসপ্লে: ইনভার্টারটির ডিসপ্লেতে ভোল্টেজ, কারেন্ট, পাওয়ার ইত্যাদির বিভিন্ন তথ্য দেখা যায়, যা সিস্টেমের স্ট্যাটাস সহজেই বুঝতে সহায়ক।

৫. ব্যবহার বান্ধব ডিজাইন: ইনভার্টারের ডিজাইন ব্যবহার বান্ধব এবং সহজ ইনস্টলেশনের সুবিধা প্রদান করে।

 

লোডশেডিং এর সমাধান:

লোডশেডিং, বিশেষ করে বাংলাদেশে, একটি বড় সমস্যা। ইনভার্টার এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে আপনি বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধাবিঘ্ন ছাড়াই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে পারেন এবং সেভ করতে পারেন বিদ্যুৎ বিল।

১. নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ: এই ইনভার্টারটি আপনার সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা লোডশেডিংয়ের সময়ও বিদ্যুৎ প্রদান করতে সক্ষম।

২. অটো-স্টার্ট ফাংশন: লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ ফিরে আসার সাথে সাথে ইনভার্টারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় চালু হয়, যা সিস্টেমকে সবসময় কার্যকরী রাখে।

৩. বিদ্যুৎ ভিল সেভ: সাধারন আইপিএস ব্যাটারি চার্জ করে এবং এ ব্যাকআপ দেয়। আর তার জন্য গ্রিডলাইন থেকে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে এটিও আপনার বিদ্যুৎ বিলে যোগ হয়। অন্যদিকে সোলার ইনভার্টার-এ ব্যাটারি চার্জের বিদ্যুৎ সরাবরাহ হয় সৌরশক্তি থেকে যা আপনার বিদ্যুৎ বিলকে সেভ করে। কিছু কিছু ইনভার্টার ব্যাটারি চার্জের পাশাপাশি সরাসরি সৌরশক্তি থেকে আপনার গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি চালাতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল সম্পূর্ণভাবে বেঁচে যায়।

 

শক্তি খরচ কমানোর উপায়:

অফ গ্রিড ইনভার্টার শক্তি খরচ কমাতে সাহায্য করে, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার বিদ্যুৎ বিল কমাতে সক্ষম।

১. সোলার পাওয়ার ব্যবহার: এই ইনভার্টারটি সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য। সোলার পাওয়ার ব্যবহার করে আপনি বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারবেন।

২. ব্যাটারি স্টোরেজ: Growatt ইনভার্টার ব্যাটারি স্টোরেজ সাপোর্ট করে, যা দিনের বেলায় সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাতের বেলায় বা লোডশেডিংয়ের সময় ব্যবহার করা যায়।

৩. দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স: Growatt ইনভার্টারের দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে যে আপনি সোলার সিস্টেমের কার্যকারিতা দীর্ঘ সময় ধরে উপভোগ করতে পারবেন, যা আপনার মোট শক্তি খরচ কমাতে সহায়ক।

 

অফ গ্রিড ইনভার্টার লোডশেডিং এবং শক্তি খরচ কমানোর একটি কার্যকরী সমাধান। এর উচ্চ দক্ষতা, স্মার্ট মনিটরিং, উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং ব্যবহার বান্ধব ডিজাইন একে আরও কার্যকরী করে তুলেছে। সোলার পাওয়ার ব্যবহার করে আপনি লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং শক্তি খরচ সাশ্রয় করতে পারবেন।